বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

দুবাইয়ে বাংলাদেশি দম্পতির প্রতারণার জাল

সাংবাদিকের নাম

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:৪১ পিএম

পরিবারের সুখের আশায় দীর্ঘ সাড়ে ৮ বছর আগে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর যুবক মো. আশরাফুজ্জামান পরশ। শারজাহর একটি দোকানে লন্ড্রির করার কাজ দিয়ে শুরু হয় তার প্রবাস জীবন। পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে তিনি এক সময় ওই দোকানটি কিনে নেন। ব্যবসার আয়ে একটু একটু করে সুখের মুখ দেখছিলেন পরশ। সেখানেই ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে করেন বাংলাদেশি তরুণী সুমি আক্তারকে। বিয়ের পর স্ত্রীকে দেশে পাঠিয়ে বছর দুয়েক আগে পরশও দেশে ফেরেন। এই সময়ে যথাক্রমে ২ বছর ও ১০ মাস বয়সী দুই সন্তান আলোকিত করে তাদের কোল। এর মাঝেই দুবাইয়ে পরশের সঙ্গে পরিচয় হয় বাংলাদেশি যুবক রেজোয়ানুল ইসলামের। সেখানে প্রতিষ্ঠিত পরশকে ঘিরে প্রতারণার জাল পাতে রেজোয়ানুল। তার ফাঁদে পড়ে পরশ তার লন্ড্রি দোকানটি বিক্রি করে দেন। শারজাহ ছেড়ে আবুধাবিতে একটি দোকান দেয়ার কথা বলে পরশের কাছ থেকে ব্যাংক ডিপোজিটের নামে সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রেজোয়ানুল। কৌশলে পরশের ব্যাংক চেক ও এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ডও নিয়ে যায় সে। পরশের ব্যাংকে থাকা ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েও রেজোয়ানুল ক্ষান্ত না হয়ে নতুন চাল চালে দ্বিতীয় স্ত্রী নীলাকে দিয়ে।

দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিলে স্ত্রী নীলাকে দিয়ে রেজোয়ানুল মামলা করায় পরশের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ২০২০ সালের ৯ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয় পরশকে। পরশের জেলে যাওয়ার বিষয়টি গোপন করে রেজোয়ানুল দেশে থাকা পরশের স্ত্রী সুমিকে ফোন করে। জানায়, পরশ ঝামেলায় পড়েছে, মিটমাট করতে না পারলে দেশে ফিরতে পারবে না। এ জন্য টাকা লাগবে। তার কথা মতো সুমি আক্তার ৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা রেজোয়ানুলকে পাঠান। পরবর্তীতে নানাভাবে রেজোয়ানুলকে কয়েক দফায় ১৪ লাখ টাকা পাঠান সুমি। এভাবে আশরাফুজ্জামান পরশের জন্য রেজোয়ানুলের কাছে টাকা পাঠাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তার পরিবার। প্রতারণার শিকার হয়ে দুবাইয়ের কারাগারে বন্দি আশরাফুজ্জামান পরশ কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের চান্দপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মো. জমরুদ ভূঁইয়ার ছেলে।

গতকাল দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি দম্পতি রেজোয়ানুল-নীলার প্রতারণার জালে সর্বস্বান্ত হওয়ার বিবরণ দেয় আশরাফুজ্জামান পরশের পরিবার। শহরের গৌরাঙ্গবাজার এলাকায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার আশরাফুজ্জামান পরশের স্ত্রী সুমি আক্তার, পিতা মো. জমরুদ ভূঁইয়া, মাতা মোছা. কামরুন্নাহার এবং চাচা আমানুল হক বাবলু উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন। পরশের স্ত্রী সুমি আক্তার জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দুবাইয়ের জেল থেকে পরশ ফোন করে জানান, তিনি মিথ্যা মামলায় জেলে গেছেন। দুবাইয়ে পরশের কেনা গাড়ি এবং বাড়িতে আসার জন্য কেনা সবকিছু রেজোয়ান ও তার স্ত্রী নীলা লুট করে নিয়ে গেছে। পরে গত এপ্রিল মাসে পরশ জানান, তার ১৩ বছরের সাজা হয়েছে এবং জেলখানা থেকে আপিল করার পর সাজা ৮ বছর কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।

সুমি আক্তার আরও জানান, দুবাইয়ে থাকা তার স্বামীর পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, রেজোয়ানুল একটি প্রতারক চক্রের হোতা। নিরীহ প্রবাসীদের টার্গেট করে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করাই চক্রটির কাজ। রেজোয়ানুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম এবং তার স্ত্রী নীলার বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গীতে এইটুকুই কেবল জানতে পেরেছেন তিনি।সুমি আক্তার অভিযোগ করেন, গত ২৭শে আগস্ট প্রতারক রেজোয়ানুল তাকে ফোন করে নানা হুমকি দিয়েছে। পরশের সাজা শেষ হলে আরও ১২ বছরের সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও সে হুমকি দিয়েছে। তিনি প্রতারক রেজোয়ানুলের হাত থেকে স্বামী আশরাফুজ্জামান পরশকে বাঁচাতে প্রতারক রেজোয়ানুল চক্রের বিচার ও স্বামীর মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পরশের পিতা মো. জমরুদ ভূঁইয়া জানান, প্রতারক রেজোয়ানের দাবি মেটাতে গিয়ে দুবাইয়ে তার কাছে প্রায় ২২ লাখ টাকা পাঠাতে হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তাদের স্বর্ণালংকার, মোটরসাইকেল, জমি ও সহায়-সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তারা নিঃস্ব। তারপরও বিনা অপরাধে পরশ দুবাইয়ে জেলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। এরপরও প্রতারক রেজোয়ানের ফাঁদ থেকে আমার ছেলেকে রক্ষা করতে পারছি না। এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জমরুদ ভূঁইয়া।